কত হিজরীতে রোজা ফরজ হয় ?

Share this
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে এবং রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও সক্ষম মুসলমানের জন্য আবশ্যক। কিন্তু কত হিজরীতে রোজা ফরজ হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ইসলামের ইতিহাস, কুরআনের আয়াত এবং হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন।
ইসলামিক ইতিহাস:
ইসলামিক ইতিহাস অনুযায়ী, রোজা ফরজ হয়েছিল হিজরতের দ্বিতীয় বছরে। হিজরত হলো নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সঙ্গীদের মক্কা থেকে মদিনায় অভিবাসন। হিজরতের পর ইসলামিক ক্যালেন্ডার বা হিজরি সন গণনা শুরু হয়। হিজরতের দ্বিতীয় বছরে রোজা ফরজ করা হয়, এবং সেই থেকে মুসলমানরা রমজান মাসে রোজা রাখা শুরু করে।
কুরআনের আয়াত:
রোজা ফরজ হওয়ার বিষয়ে কুরআনে স্পষ্ট আয়াত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, রোজা ফরজ করা হয়েছে মুসলমানদের জন্য, এবং এটি পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্যও ফরজ ছিল। রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা তাকওয়া অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে।
হাদিসের বর্ণনা:
হাদিসে রোজা ফরজ হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত দেওয়া, রমজান মাসে রোজা রাখা এবং বাইতুল্লাহর হজ করা।” (বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি, এবং এটি ফরজ ইবাদত।
রোজা ফরজ হওয়ার পটভূমি:
রোজা ফরজ হওয়ার পটভূমি হলো হিজরতের দ্বিতীয় বছর। এই সময়ে ইসলামিক শরীয়াহ বা আইন ব্যবস্থা গঠিত হচ্ছিল, এবং বিভিন্ন ইবাদত ফরজ করা হচ্ছিল। রোজা ফরজ করার মাধ্যমে মুসলমানদের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতি সাধনের চেষ্টা করা হয়।
রোজা ফরজ হওয়ার উদ্দেশ্য:
রোজা ফরজ হওয়ার উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের তাকওয়া অর্জন করা। তাকওয়া হলো আল্লাহর ভয় এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের নফস বা কুপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে।
আরও পড়ুনঃ আজকে রোজা কয়টা ?
রোজা ফরজ হওয়ার পর মুসলমানদের করণীয়:
রোজা ফরজ হওয়ার পর মুসলমানদের করণীয় হলো:
১. রোজা রাখা: প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও সক্ষম মুসলমানের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ।
২. তাকওয়া অর্জন: রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা।
৩. কাজা রোজা রাখা: যদি কেউ রোজা রাখতে না পারে, তাহলে পরে কাজা রোজা রাখা আবশ্যক।
৪. কাফফারা দেওয়া: যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করে, তাহলে তার জন্য কাফফারা দেওয়া আবশ্যক।
উপসংহার:
রোজা ফরজ হয়েছিল হিজরতের দ্বিতীয় বছরে। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, এবং প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও সক্ষম মুসলমানের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা তাকওয়া অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। মনে রাখবেন, রোজা রাখা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, এবং এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম।