যাকাত কাদের দেয়া যাবে?

Share this
যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। এটি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার সম্পদের একটি অংশ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বণ্টন করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। যাকাত কাদের দেওয়া যাবে, তা ইসলামী শরিয়তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে যাকাত কাদের দেওয়া যাবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যাকাতের সংজ্ঞা
যাকাত হলো ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী নির্ধারিত সম্পদের একটি অংশ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বণ্টন করা। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার সম্পদের পরিশুদ্ধি অর্জন করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত দাও।” (সুরা বাকারা, আয়াত ১১০)।
যাকাতের হকদার
যাকাত কাদের দেওয়া যাবে, তা ইসলামী শরিয়তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “যাকাত হলো ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়কারী, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য।” (সুরা তাওবা, আয়াত ৬০)।
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যাকাতের হকদার আট শ্রেণীর লোক। নিম্নে এই আট শ্রেণীর লোক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. ফকির: ফকির হলো সেই ব্যক্তি, যার কাছে প্রয়োজনীয় জীবিকা নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। ফকিরের কাছে যাকাত দেওয়া যাবে।
২. মিসকিন: মিসকিন হলো সেই ব্যক্তি, যার কাছে প্রয়োজনীয় জীবিকা নির্বাহের জন্য সম্পদ নেই। মিসকিনের কাছে যাকাত দেওয়া যাবে।
৩. যাকাত আদায়কারী: যাকাত আদায়কারী হলো সেই ব্যক্তি, যাকে যাকাত আদায় ও বণ্টনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাকাত আদায়কারীর কাছে যাকাত দেওয়া যাবে।
৪. যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন: যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন, তারা হলো সেই ব্যক্তি, যাদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যাকাত দেওয়া যাবে। এই শ্রেণীর লোকের কাছে যাকাত দেওয়া যাবে।
৫. দাসমুক্তি: দাসমুক্তির জন্য যাকাত দেওয়া যাবে। এই শ্রেণীর লোকের কাছে যাকাত দেওয়া যাবে।
৬. ঋণগ্রস্ত: ঋণগ্রস্ত হলো সেই ব্যক্তি, যার উপর ঋণের বোঝা রয়েছে। ঋণগ্রস্তের কাছে যাকাত দেওয়া যাবে।
৭. আল্লাহর পথে: আল্লাহর পথে যাকাত দেওয়া যাবে। এই শ্রেণীর লোকের কাছে যাকাত দেওয়া যাবে।
৮. মুসাফির: মুসাফির হলো সেই ব্যক্তি, যিনি ভ্রমণরত অবস্থায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন। মুসাফিরের কাছে যাকাত দেওয়া যাবে।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম
যাকাত দেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। নিম্নে যাকাত দেওয়ার নিয়ম আলোচনা করা হলো:
১. নিসাব পরিমাণ সম্পদ: যাকাত দেওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা জরুরি। নিসাব হলো ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী নির্ধারিত সম্পদের পরিমাণ। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দেওয়া ওয়াজিব।
২. সম্পদের মালিকানা: যাকাত দেওয়ার জন্য সম্পদের মালিকানা থাকা জরুরি। সম্পদের মালিকানা থাকলে যাকাত দেওয়া ওয়াজিব।
৩. সম্পদের পরিশুদ্ধি: যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদের পরিশুদ্ধি অর্জন করা যায়। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদের পরিশুদ্ধি অর্জন করা উচিত।
৪. যাকাতের পরিমাণ: যাকাতের পরিমাণ হলো সম্পদের ২.৫%। সম্পদের ২.৫% যাকাত দেওয়া ওয়াজিব।
আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজ ৮ রাকাত পড়া যাবে কি?
যাকাত দেওয়ার ফজিলত
যাকাত দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি যাকাত দেবে, তার সম্পদ বৃদ্ধি পাবে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১০১৬)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারে। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
যাকাত না দেওয়ার পরিণতি
যাকাত না দেওয়ার পরিণতি সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি যাকাত দেবে না, তার সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস নং ৬৪১)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, যাকাত না দেওয়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার সম্পদ ধ্বংস করতে পারে। যাকাত না দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
উপসংহার
যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। এটি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার সম্পদের একটি অংশ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বণ্টন করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। যাকাত কাদের দেওয়া যাবে, তা ইসলামী শরিয়তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যাকাতের হকদার আট শ্রেণীর লোক। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার সম্পদের পরিশুদ্ধি অর্জন করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। যাকাত দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। যাকাত না দেওয়ার পরিণতি সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।