রোজা অবস্থায় চোখ নাক ও কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে কিনা?

Share this
রোজা রাখা অবস্থায় চোখ, নাক ও কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে কিনা, এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন, বিশেষ করে যারা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে এই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করেন। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টি পরিষ্কার করা প্রয়োজন। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. রোজা ও ড্রপ ব্যবহারের সম্পর্ক
রোজা রাখা অবস্থায় চোখ, নাক বা কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনে সংশয় থাকে। মূলত রোজা ভঙ্গ হয় যখন কিছু পেটে বা শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। চোখ, নাক বা কানের ড্রপ ব্যবহার করলে তা সরাসরি পেটে যায় কিনা, তা বিবেচ্য বিষয়। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এই বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য কিছু মূলনীতি রয়েছে।
২. ইসলামী শরীয়তের মূলনীতি
ইসলামী শরীয়তের মতে, রোজা ভঙ্গ হয় যখন কোনো বস্তু ইচ্ছাকৃতভাবে পেটে বা শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। চোখ, নাক বা কানের ড্রপ ব্যবহার করলে তা সাধারণত পেটে যায় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে নাকের ড্রপ গলার ভিতরে চলে যেতে পারে। এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ইসলামী স্কলাররা কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
৩. চোখের ড্রপ ব্যবহার
চোখের ড্রপ ব্যবহার করা রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। কারণ চোখের ড্রপ চোখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং তা পেটে বা শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে না। ইসলামী স্কলাররা একমত যে, চোখের ড্রপ ব্যবহার করা জায়েজ এবং এটি রোজা ভঙ্গ করে না।
উদাহরণ: নবী মুহাম্মদ (সা.) রোজা রাখা অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করতেন, যা চোখের জন্য একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি থেকে বোঝা যায়, চোখে কিছু দেওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ নয়।
৪. নাকের ড্রপ ব্যবহার
নাকের ড্রপ ব্যবহার করা নিয়ে কিছু সতর্কতা প্রয়োজন। নাকের ড্রপ ব্যবহার করলে তা গলার ভিতরে চলে যেতে পারে, যা রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। তবে যদি ড্রপের পরিমাণ খুব কম হয় এবং তা গলার ভিতরে না যায়, তবে তা রোজা ভঙ্গ করবে না।
ইসলামী স্কলারদের মতামত:
- কিছু স্কলার মনে করেন, নাকের ড্রপ ব্যবহার করা রোজা ভঙ্গের কারণ, কারণ তা গলার ভিতরে চলে যেতে পারে।
- অন্য কিছু স্কলার মনে করেন, যদি ড্রপের পরিমাণ খুব কম হয় এবং তা গলার ভিতরে না যায়, তবে তা রোজা ভঙ্গ করবে না।
সুতরাং, নাকের ড্রপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যদি ড্রপ ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি হয়, তবে তা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে গলার ভিতরে যেন না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫. কানের ড্রপ ব্যবহার
কানের ড্রপ ব্যবহার করা রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। কারণ কানের পর্দা সাধারণত অক্ষত থাকলে ড্রপ কানের ভিতরে সীমাবদ্ধ থাকে এবং তা পেটে বা শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে না। ইসলামী স্কলাররা একমত যে, কানের ড্রপ ব্যবহার করা জায়েজ এবং এটি রোজা ভঙ্গ করে না।
৬. রোজা ভঙ্গের সাধারণ কারণ
রোজা ভঙ্গের কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা।
- সহবাস করা।
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।
- হায়েজ বা নিফাসের রক্ত দেখা দেওয়া।
- শরীরের অভ্যন্তরে কোনো বস্তু প্রবেশ করানো (যেমন ইনজেকশন বা নাকের ড্রপ যা গলার ভিতরে চলে যায়)।
চোখ, নাক বা কানের ড্রপ ব্যবহার করলে তা সাধারণত রোজা ভঙ্গের কারণ নয়, তবে নাকের ড্রপের ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন।