তারাবির নামাজের নিয়ম!

Share this
তারাবিহ নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। এটি রমজানের রাতগুলোতে পড়া হয় এবং এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। তারাবিহ নামাজের মাধ্যমে মুসলমানরা রমজান মাসের রাতগুলোকে ইবাদত ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সজীব করে তোলে। তারাবিহ নামাজের নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে তারাবিহ নামাজের নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
তারাবিহ নামাজের পরিচয়
তারাবিহ নামাজ হলো রমজান মাসের রাতগুলোতে পড়া একটি বিশেষ নামাজ। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, অর্থাৎ এটি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নিয়মিত আমল ছিল এবং তিনি মুসলমানদেরকে এ নামাজ পড়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তারাবিহ নামাজ সাধারণত ইশার নামাজের পরে পড়া হয় এবং এটি জামাতের সাথে পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
তারাবিহ নামাজের সময়
তারাবিহ নামাজের সময় হলো ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত। তবে তারাবিহ নামাজ পড়ার উত্তম সময় হলো রাতের প্রথমাংশ, বিশেষ করে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বান্দাদের ডেকে বলেন, কে আছো যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দেবো? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো?” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১১৪৫)।
তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা
তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত। এটি হজরত উমর (রা.) এর সময় থেকে চলে আসছে এবং সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্য রয়েছে। তবে কেউ যদি ৮ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়ে, তাও জায়েজ আছে। তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে স্পষ্ট কোনো হাদিস নেই, তবে তিনি রমজান মাসে রাতের নামাজে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও তারাবিহ নামাজ জামাতের সাথে পড়তেন।
তারাবিহ নামাজের নিয়ম
তারাবিহ নামাজের নিয়ম সাধারণ নফল নামাজের মতোই। তবে এটি জামাতের সাথে পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। তারাবিহ নামাজের নিয়ম নিম্নরূপ:
১. নিয়ত করা: প্রথমে তারাবিহ নামাজের নিয়ত করতে হবে। নিয়ত হলো মনে মনে এই ইচ্ছা পোষণ করা যে, আমি আল্লাহর জন্য তারাবিহ নামাজ পড়ছি।
২. তাকবিরে তাহরিমা: নামাজ শুরু করতে তাকবিরে তাহরিমা বলা, অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজে দাঁড়ানো।
৩. সুরা ফাতিহা পড়া: প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। সুরা ফাতিহা নামাজের একটি অপরিহার্য অংশ।
৪. সুরা বা আয়াত পড়া: সুরা ফাতিহার পরে অন্য কোনো সুরা বা কুরআনের আয়াত পড়তে হবে। সাধারণত তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে কুরআনের বিভিন্ন সুরা পড়া হয়।
৫. রুকু ও সিজদা করা: সুরা পড়ার পরে রুকু ও সিজদা করতে হবে। রুকু ও সিজদা নামাজের অপরিহার্য অংশ।
৬. তাশাহহুদ পড়া: শেষ রাকাতে তাশাহহুদ পড়তে হবে। তাশাহহুদ হলো নামাজের শেষ অংশে বসে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উপর দরুদ পড়া।
৭. সালাম ফেরানো: তাশাহহুদ পড়ার পরে ডান ও বাম দিকে সালাম ফেরাতে হবে। সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ হয়।
তারাবিহ নামাজের বিশেষ দোয়া
তারাবিহ নামাজের বিশেষ কোনো দোয়া নেই, তবে নামাজের মধ্যে সাধারণ দোয়া ও তাসবিহ পড়া যায়। তারাবিহ নামাজের শেষ রাকাতে দোয়া কুনুত পড়া যায়, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। দোয়া কুনুত হলো একটি বিশেষ দোয়া, যা নামাজের শেষ রাকাতে পড়া হয়।
তারাবিহ নামাজের ফজিলত
তারাবিহ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২০০৯)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, তারাবিহ নামাজ পড়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার পূর্বের সব গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে। তারাবিহ নামাজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।
তারাবিহ নামাজের জামাত
তারাবিহ নামাজ জামাতের সাথে পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইমামের সাথে তারাবিহ নামাজ পড়বে, সে পুরো রাত জেগে ইবাদত করার সওয়াব পাবে।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩৭৫)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, তারাবিহ নামাজ জামাতের সাথে পড়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান পুরো রাত জেগে ইবাদত করার সওয়াব পেতে পারে। তারাবিহ নামাজ জামাতের সাথে পড়ার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।
তারাবিহ নামাজের শেষে দোয়া
তারাবিহ নামাজের শেষে দোয়া করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া কবুল করা হয়।” (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৭৫২)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, তারাবিহ নামাজের শেষে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। তারাবিহ নামাজের শেষে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।
উপসংহার
তারাবিহ নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। এটি রমজানের রাতগুলোতে পড়া হয় এবং এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। তারাবিহ নামাজের নিয়ম সাধারণ নফল নামাজের মতোই, তবে এটি জামাতের সাথে পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। তারাবিহ নামাজ পড়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার পূর্বের সব গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে। তারাবিহ নামাজের শেষে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। তারাবিহ নামাজের মাধ্যমে মুসলমানরা রমজান মাসের রাতগুলোকে ইবাদত ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সজীব করে তোলে। তারাবিহ নামাজের নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।