রোজা রেখে হাত পায়ের নখ কাটা যাবে কিনা?

Share this

রোজা রাখা অবস্থায় হাত ও পায়ের নখ কাটা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টি পরিষ্কার করা প্রয়োজন। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. রোজা ও নখ কাটার সম্পর্ক

রোজা রাখা অবস্থায় হাত বা পায়ের নখ কাটা জায়েজ আছে। নখ কাটা রোজার কোনো ক্ষতি করে না। নখ কাটা একটি স্বাভাবিক কাজ, যা শরীরের পরিচ্ছন্নতা ও সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। ইসলামে পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নখ কাটা শরীরের পরিচ্ছন্নতার অংশ, তাই রোজা রেখে নখ কাটতে কোনো বাধা নেই।

২. নখ কাটার ইসলামী নির্দেশনা

ইসলামে নখ কাটার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বা নিয়ম নেই। তবে নখ দীর্ঘ সময় না কেটে রাখা উচিত নয়, কারণ এতে নোংরা ও জীবাণু জমতে পারে। নবী মুহাম্মদ (সা.) নিয়মিত নখ কাটার অভ্যাস করতেন এবং উম্মতকেও পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই রোজা রাখা অবস্থায়ও নখ কাটা যাবে।

৩. রোজার উদ্দেশ্য ও নখ কাটা

রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা, আত্মসংযম ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। নখ কাটা রোজার উদ্দেশ্য বা নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এটি একটি শারীরিক কাজ, যা রোজার কোনো ক্ষতি করে না। তবে নখ কাটার সময় সতর্ক থাকা উচিত, যাতে কোনোভাবে রোজা ভঙ্গ না হয়।

৪. রোজা রেখে নখ কাটার সময় সতর্কতা

রোজা রেখে নখ কাটার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • রক্তপাত এড়ানো: নখ কাটার সময় সতর্ক থাকুন, যাতে কেটে গিয়ে রক্ত না বের হয়। রক্ত বের হলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি এড়ানো: যদি নখ কাটার জন্য অতিরিক্ত শক্তি বা সময় ব্যয় করতে হয়, তবে তা এড়ানো উচিত। রোজা রাখা অবস্থায় শরীর দুর্বল থাকতে পারে, তাই সহজভাবে নখ কাটুন।
  • অন্যান্য কাজের সাথে সমন্বয়: নখ কাটার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ না করে অন্যান্য কাজের সাথে সমন্বয় করে নিন। যেমন, গোসলের সময় বা ওজুর সময় নখ কাটা যেতে পারে।

৫. ইসলামী স্কলারদের মতামত

ইসলামী স্কলাররা একমত যে, রোজা রেখে নখ কাটা জায়েজ। এটি রোজার কোনো ক্ষতি করে না। তবে নখ কাটার সময় সতর্ক থাকা উচিত, যাতে রোজা ভঙ্গ না হয়। কোনো কোনো স্কলার পরামর্শ দেন যে, নখ কাটার মতো কাজগুলো ইফতারের পর বা রোজা না থাকা সময়ে করা ভালো, যাতে রোজা রাখা অবস্থায় কোনো ঝামেলা না হয়।

আরও পড়ুনঃ রমজানে মৃত ব্যক্তির জন্য কিভাবে দোয়া করবো?

৬. নখ কাটার আদব

নখ কাটার সময় কিছু আদব মেনে চলা উচিত:

  • ডান হাত দিয়ে শুরু করা: ইসলামে ডান হাত দিয়ে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই ডান হাতের নখ আগে কাটুন।
  • নিয়মিত নখ কাটা: নখ দীর্ঘ সময় না কেটে রাখা উচিত নয়। নিয়মিত নখ কাটা শরীরের পরিচ্ছন্নতার জন্য ভালো।
  • নখ ফেলা: নখ কাটার পর সঠিকভাবে ফেলা উচিত। নখ যেখানে-সেখানে ফেলা উচিত নয়, কারণ এটি অন্যের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

৭. রোজা ও শরীরের পরিচ্ছন্নতা

রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নখ কাটা, চুল কাটা, গোসল করা ইত্যাদি কাজগুলো রোজা রাখা অবস্থায় করা যায়। ইসলামে পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।” তাই রোজা রাখা অবস্থায়ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উচিত।

৮. রোজা ভঙ্গের কারণ

রোজা ভঙ্গের কিছু নির্দিষ্ট কারণ আছে, যেমন খাওয়া, পান করা, সহবাস করা ইত্যাদি। নখ কাটা রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। তবে যদি নখ কাটার সময় কেটে গিয়ে রক্ত বের হয় এবং তা গিলে ফেলা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হতে পারে। তাই সতর্ক থাকা উচিত।

৯. উপসংহার

রোজা রাখা অবস্থায় হাত ও পায়ের নখ কাটা জায়েজ। এটি রোজার কোনো ক্ষতি করে না। তবে নখ কাটার সময় সতর্ক থাকা উচিত, যাতে রোজা ভঙ্গ না হয়। নিয়মিত নখ কাটা শরীরের পরিচ্ছন্নতার জন্য ভালো এবং ইসলামে পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই রোজা রাখা অবস্থায়ও নখ কাটা যাবে, তবে সতর্কতার সাথে।

Share this

এই পোষ্টগুলো পড়তে পারেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *