দিনে ঘুমালে স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে ?

Share this
দিনে ঘুমানোর সময় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হবে কিনা, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টি পরিষ্কার করা প্রয়োজন। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. স্বপ্নদোষ কী?
স্বপ্নদোষ হলো ঘুমের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে বীর্যপাত হওয়া। এটি একটি অনৈচ্ছিক প্রক্রিয়া, যা ঘুমের মধ্যে ঘটে। স্বপ্নদোষের মাধ্যমে শরীর থেকে বীর্য নির্গত হয়, যা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে নাপাক (অপবিত্র) হিসেবে বিবেচিত হয়।
২. স্বপ্নদোষ ও রোজার সম্পর্ক
স্বপ্নদোষ একটি অনৈচ্ছিক প্রক্রিয়া, যা ঘুমের মধ্যে ঘটে। এটি মানুষের ইচ্ছা বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ইসলামী শরীয়তের মতে, অনৈচ্ছিক কাজের জন্য ব্যক্তি দায়ী নয়। তাই স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না।
৩. ইসলামী স্কলারদের মতামত
ইসলামী স্কলাররা একমত যে, স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না। এটি একটি অনৈচ্ছিক প্রক্রিয়া, যা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “আমার উম্মতের উপর তিনটি বিষয় ক্ষমা করা হয়েছে: ভুলে যাওয়া, অনৈচ্ছিক কাজ এবং জোরপূর্বক করা কাজ।” (ইবনে মাজাহ)। তাই স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না।
৪. স্বপ্নদোষের পর করণীয়
স্বপ্নদোষের পর কিছু করণীয় রয়েছে:
- গোসল করা: স্বপ্নদোষের পর গোসল করা ওয়াজিব। গোসল না করা পর্যন্ত ব্যক্তি নাপাক অবস্থায় থাকেন। তবে গোসল না করা পর্যন্ত রোজা ভঙ্গ হয় না।
- নিয়ত বজায় রাখা: স্বপ্নদোষের পরও রোজার নিয়ত বজায় রাখা উচিত। গোসল করে পবিত্র হয়ে রোজা পালন করা যায়।
- সতর্কতা: স্বপ্নদোষের পর গোসল করা জরুরি, তবে তাড়াহুড়ো না করে সঠিকভাবে গোসল করা উচিত।
৫. রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা ভঙ্গের কিছু নির্দিষ্ট কারণ আছে, যেমন:
- ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা।
- সহবাস করা।
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।
- হায়েজ বা নিফাসের রক্ত দেখা দেওয়া।
স্বপ্নদোষ রোজা ভঙ্গের কারণ নয়, কারণ এটি অনৈচ্ছিক প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুনঃ রোজা রেখে হাত পায়ের নখ কাটা যাবে কিনা?
৬. স্বপ্নদোষ ও গোসল
স্বপ্নদোষের পর গোসল করা ওয়াজিব। গোসল না করা পর্যন্ত ব্যক্তি নাপাক অবস্থায় থাকেন। তবে গোসল না করা পর্যন্ত রোজা ভঙ্গ হয় না। গোসল করে পবিত্র হয়ে রোজা পালন করা যায়। গোসলের সময় সতর্ক থাকা উচিত, যাতে পানি গলার ভিতরে না যায়।
৭. স্বপ্নদোষের সময় সতর্কতা
স্বপ্নদোষের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- গোসলের সময় সতর্কতা: গোসলের সময় পানি গলার ভিতরে না যায়, তা নিশ্চিত করুন। পানি গলার ভিতরে গেলে রোজা ভঙ্গ হতে পারে।
- নিয়ত বজায় রাখা: স্বপ্নদোষের পরও রোজার নিয়ত বজায় রাখা উচিত। গোসল করে পবিত্র হয়ে রোজা পালন করা যায়।
- অতিরিক্ত চিন্তা এড়ানো: স্বপ্নদোষের পর অতিরিক্ত চিন্তা বা দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা অনৈচ্ছিক।
৮. রোজা ও শরীরের পরিচ্ছন্নতা
রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বপ্নদোষের পর গোসল করা ওয়াজিব। গোসল করে পবিত্র হয়ে রোজা পালন করা যায়। ইসলামে পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।” তাই রোজা রাখা অবস্থায়ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উচিত।
৯. উপসংহার
দিনে ঘুমানোর সময় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হয় না। এটি একটি অনৈচ্ছিক প্রক্রিয়া, যা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ইসলামী শরীয়তের মতে, অনৈচ্ছিক কাজের জন্য ব্যক্তি দায়ী নয়। স্বপ্নদোষের পর গোসল করা ওয়াজিব, তবে গোসল না করা পর্যন্ত রোজা ভঙ্গ হয় না। গোসল করে পবিত্র হয়ে রোজা পালন করা যায়। তাই স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না, তবে গোসল করে পবিত্র হয়ে রোজা পালন করা উচিত।