তারাবির নামাজ ৮ রাকাত পড়া যাবে কি?

Share this
তারাবিহ নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। এটি রমজানের রাতগুলোতে পড়া হয় এবং এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত, তবে কিছু আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাতও পড়া যায়। নিম্নে তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়া যাবে কি না, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ
তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত। এটি হজরত উমর (রা.) এর সময় থেকে চলে আসছে এবং সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্য রয়েছে। তবে কিছু আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাতও পড়া যায়। এই মতের পক্ষে তারা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আমলকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেন।
তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়ার দলিল
তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়ার পক্ষে কিছু দলিল রয়েছে। নিম্নে এই দলিলগুলো আলোচনা করা হলো:
১. রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আমল: রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রাতের নামাজে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রাতের নামাজে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, যদি কেউ তাকে ডাকত, তাহলে সে মনে করত যে, তিনি কখনই বসবেন না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২০১৩)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রাতের নামাজে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন, তবে তিনি কত রাকাত নামাজ পড়তেন, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তাই কিছু আলেমের মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ৮ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়তেন।
২. হজরত আয়েশা (রা.) এর বর্ণনা: হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রাতের নামাজে ১১ রাকাত পড়তেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১১৪৭)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রাতের নামাজে ১১ রাকাত পড়তেন। এই ১১ রাকাতের মধ্যে ৮ রাকাত তারাবিহ নামাজ এবং ৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন। তাই কিছু আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়া যায়।
তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়ার পদ্ধতি
তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়ার পদ্ধতি সাধারণ তারাবিহ নামাজের মতোই। নিম্নে তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়ার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
১. নিয়ত করা: প্রথমে তারাবিহ নামাজের নিয়ত করতে হবে। নিয়ত হলো মনে মনে এই ইচ্ছা পোষণ করা যে, আমি আল্লাহর জন্য তারাবিহ নামাজ পড়ছি।
২. তাকবিরে তাহরিমা: নামাজ শুরু করতে তাকবিরে তাহরিমা বলা, অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজে দাঁড়ানো।
৩. সুরা ফাতিহা পড়া: প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। সুরা ফাতিহা নামাজের একটি অপরিহার্য অংশ।
৪. সুরা বা আয়াত পড়া: সুরা ফাতিহার পরে অন্য কোনো সুরা বা কুরআনের আয়াত পড়তে হবে। সাধারণত তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে কুরআনের বিভিন্ন সুরা পড়া হয়।
৫. রুকু ও সিজদা করা: সুরা পড়ার পরে রুকু ও সিজদা করতে হবে। রুকু ও সিজদা নামাজের অপরিহার্য অংশ।
৬. তাশাহহুদ পড়া: শেষ রাকাতে তাশাহহুদ পড়তে হবে। তাশাহহুদ হলো নামাজের শেষ অংশে বসে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উপর দরুদ পড়া।
৭. সালাম ফেরানো: তাশাহহুদ পড়ার পরে ডান ও বাম দিকে সালাম ফেরাতে হবে। সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ হয়।
আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের দোয়া!
তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়ার ফজিলত
তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়ার ফজিলত সাধারণ তারাবিহ নামাজের মতোই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২০০৯)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, তারাবিহ নামাজ পড়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার পূর্বের সব গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে। তারাবিহ নামাজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।
তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়ার বৈধতা
তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়া জায়েজ আছে। ইসলামী স্কলারদের মধ্যে কিছু আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়া যায়। এই মতের পক্ষে তারা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আমলকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেন। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত পড়া উত্তম।
উপসংহার
তারাবিহ নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। এটি রমজানের রাতগুলোতে পড়া হয় এবং এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত, তবে কিছু আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাতও পড়া যায়। তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়ার পক্ষে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আমলকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়া জায়েজ আছে, তবে অধিকাংশ আলেমের মতে, তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত পড়া উত্তম। তারাবিহ নামাজ পড়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার পূর্বের সব গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে।