সাহরি খেতে না পারলে কি রোজা হবে ?

Share this

রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রোজা রাখার জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। তবে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে মানুষ সাহরি খেতে পারে না বা ভুলে যায়। এই অবস্থায় রোজা কি হবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ইসলামিক দৃষ্টিকোণ, ফিকহের নিয়ম এবং বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা প্রয়োজন।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ:

ইসলামে রোজা রাখার জন্য সাহরি খাওয়া ফরজ নয়, তবে এটি একটি সুন্নত এবং মুস্তাহাব আমল। সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজাদার শক্তি সঞ্চয় করে এবং রোজা রাখার জন্য প্রস্তুত হয়। নবী মুহাম্মদ (সা.) সাহরি খাওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং বলেছেন, “সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)

তবে যদি কেউ সাহরি খেতে না পারে বা ভুলে যায়, তাহলে তার রোজা শুদ্ধ হবে। কারণ রোজার মূল শর্ত হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। সাহরি খাওয়া রোজার শর্ত নয়, বরং এটি একটি সুন্নত আমল।

ফিকহের নিয়ম:

ইসলামিক ফিকহ অনুযায়ী, রোজা রাখার জন্য সাহরি খাওয়া জরুরি নয়। যদি কেউ সাহরি না খায় বা ভুলে যায়, তাহলেও তার রোজা শুদ্ধ হবে। তবে সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজাদার শক্তি সঞ্চয় করে এবং রোজা রাখার জন্য প্রস্তুত হয়। তাই সাহরি খাওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সাহরি না খাওয়ার কারণ:

সাহরি না খাওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন:

১. ঘুম থেকে না ওঠা: অনেক সময় রোজাদার ঘুম থেকে উঠতে পারেন না বা অ্যালার্ম বাজেনি, যার ফলে সাহরি খেতে পারেন না।

২. সময়ের অভাব: কিছু ক্ষেত্রে কাজ বা অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে সাহরি খাওয়ার সময় পাওয়া যায় না।

৩. ভুলে যাওয়া: কখনো কখনো রোজাদার সাহরি খেতে ভুলে যান।

৪. স্বাস্থ্যগত সমস্যা: কিছু লোকের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে সাহরি খেতে অসুবিধা হয়।

সাহরি না খেলে রোজার উপর প্রভাব:

সাহরি না খেলে রোজার উপর কোনো প্রভাব পড়ে না। রোজা শুদ্ধ হবে এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তবে সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজাদার শক্তি সঞ্চয় করে এবং রোজা রাখার জন্য প্রস্তুত হয়। তাই সাহরি খাওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ কিভাবে মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি কমানো যায় ?

সাহরি না খাওয়ার পরামর্শ:

যদি কেউ সাহরি না খায়, তাহলে নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি অনুসরণ করা উচিত:

১. ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন: সাহরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে অ্যালার্ম সেট করুন বা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিন।

২. সহজ ও পুষ্টিকর খাবার খান: সাহরিতে সহজ ও পুষ্টিকর খাবার খান, যা সারাদিন শক্তি দেবে।

৩. সময় ব্যবস্থাপনা: সাহরি খাওয়ার জন্য সময় ব্যবস্থাপনা করুন। প্রয়োজনে আগের রাতেই প্রস্তুতি নিন।

৪. দোয়া ও ইস্তেগফার: যদি সাহরি খেতে না পারেন, তাহলে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন এবং ইস্তেগফার করুন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

সাহরি না খাওয়ার ক্ষেত্রে করণীয়:

যদি কেউ সাহরি না খায়, তাহলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা উচিত:

১. রোজা রাখুন: সাহরি না খেলেও রোজা রাখুন। রোজা শুদ্ধ হবে এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

২. ইফতারে পুষ্টিকর খাবার খান: ইফতারে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান, যা সারাদিনের ক্লান্তি দূর করবে।

৩. পরের দিন সাহরি খাওয়ার চেষ্টা করুন: পরের দিন সাহরি খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সময়মতো ঘুম থেকে উঠুন।

৪. আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন: আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন এবং তাঁর রহমতের আশা করুন। তিনি আপনার ইচ্ছা ও প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করবেন।

উপসংহার:

সাহরি খাওয়া রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল, তবে এটি রোজার শর্ত নয়। যদি কেউ সাহরি না খায় বা ভুলে যায়, তাহলেও তার রোজা শুদ্ধ হবে এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তবে সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজাদার শক্তি সঞ্চয় করে এবং রোজা রাখার জন্য প্রস্তুত হয়। তাই সাহরি খাওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যদি কখনো সাহরি খেতে না পারেন, তাহলে আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন এবং পরের দিন সাহরি খাওয়ার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু, এবং তিনি আপনার ইচ্ছা ও প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করবেন।

Share this

এই পোষ্টগুলো পড়তে পারেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *